
সুইসাইড
: সমাধান না সূত্রপাত
১.
যদি কোন বিষয় আপনাকে খুব ভাবে ভাবায় এবং সেটি আপনার মাঝে
যখন নতুন কিছুর জন্ম হয় তবে সেটা প্রকাশের প্রয়োজন হতে পারে । সেই প্রকাশের ক্ষেত্রে
একজন চিত্রকর বেছে নেন ক্যানভাস, একজন বক্তা তার বক্তব্য, চিন্তক তার চিন্তাকে । একজন
সচেতন (!) লেখক হিসেবে আমার লেখাকেই বেছে নিতে হয় । আজও তাই, তবে এবারের বিষয় সময়-সাময়িক
একটি সমস্যা ।
বর্তমানে দাপিয়ে বেড়ানো একটা সমস্যা সুইসাইড । এটা একটা
নতুন ক্রাইসিস নয় । ২০১৯ এর সেপ্টেম্বর অনুযায়ী
ওয়ার্লড হেল্থ অরগানাইজেশন বলেছে প্রতি ৪০ সেকেন্ড অন্তর অন্তর একজন সুইসাইড করেন ।
কিন্তু একটা ব্যাপার এখানে রয়ে যায় । একজন সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার যখন কাজটি করেন, ব্যাপারটা
তখন অন্য মাত্রা পায় । ব্যাসিকালি আমাদের আত্মহত্যা ব্যাপারটাকেই ক্লিয়ার হওয়া প্রয়োজন
। তাই আজকে এ সম্পর্র্কে দু-চার লাইনের সত্য গল্প জুড়তে এসেছি ।
আচ্ছা প্রথম সুইসাইড থেকে শুরু করা যাক । পিথাগোরাসের একজন
শিষ্যের নাম ছিল এম্পিডোক্লিস, সে ছিল সক্রেটিস-পূর্ব সময়ের । ভদ্রলোকের মাঝে একটা
বিশ্বাস ছিল মৃত্যু হচ্ছে রূপান্তর মাত্র । তিনি একদিন সিসিলি আগ্নেয়গিরির মাঝে ঝাপ
দিলেন । উনার জ্ঞাতি ভাই, সজাতীয় এবং ফলোয়াররা এটার একটা ব্যাখ্যা দাড় করালেন যে এই
বিশ্বাসটি তাকে আত্মহত্যা করতে পরোচিত করেছে ।
তারপরে আসি দাস প্রথার সময়ে । দাসরা নিজেদের মুক্তির জন্য
আত্মহত্যা করতো । এটার জন্য আর্লসের সভায় সিদ্ধান্ত হলো দাসরা আত্মহত্যা করলে মালিক
দায়ী থাকবে না । রোমানদের আইনসভায়ও আইন ছিল যে আত্মহত্যা শাস্তি যোগ্য অপরাধ ।
খ্রিস্টীয় প্রথম দশকের দিকে নতুন একটা অভিনব ব্যাপার যুক্ত
হল - ‘Patriotic Suicide’ । দেখা যেত যেসব সৈন্য যুদ্ধে মারা যেত, তাদেরকে বাদ দিয়ে
দেয়া হত । তাদের কে আলাদা কোন সম্মান দেয়া হতো না । তাদের এই আত্মহত্যাকে বৈধতা দান
করা হলো । সাথে মাহাত্ম্য আরোপ করা হল । খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় সনে গালাটিয়ান সুইসাইডের উপর তৈরী করা ভাস্কর্যটি ন্যাশানাল
রোমান মিউজিয়ামে স্থান পায় । যেখানে আত্মহত্যায় মৃতদের সিমেট্রীদের স্থান দেয়া হয় ।
তবে এটা সতের শতাব্দীর দিকে ।
তখনকার এই এটিচিউডে পরিবর্তন আসে রেনেসাসের সময়ে । থমাস
মুর তার ইউটোপিয়া (১৫১৬) গ্রন্থে এই নিয়ে পক্ষে বলেন । তার মতে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি সুইসাইড করে
এটা একটি পবিত্রতম কাজ হবে । যদিও এটা জীবন উপভোগ করতে দিবে না কিন্তু অসহনীয় যাতনা
থেকে মুক্তি দিবে । যদিও তিনি স্বীকার করেছেন এটি একটি অপরাধ ।
খ্রিষ্টীয় ১৭৭৭ সনের দিকে ইনলাইটেনমেন্ট আন্দোলনের সময় ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর তাক করে কিছূ
প্রশ্নের উদয় হয়েছিলো । তার মধ্যে ডেভিড হিউম তার Essays on Suicide and the Immortality of the Soul তে বলেন জনগণ আমার থেকে কিছু বাড়তি সুবিধা পেতে পারে
বলে কেন আমি আমার কষ্টকর জীবন বয়ে চলবো । পরন্তু এটাতে কারো ক্ষতি হয় না বলে বলে তার
কাছে এটাকে কোন ক্রাইম মনে হয় নাই । যদিও ভদ্রলোক আত্মহত্যা করেন নাই । এবডোমিনাল ক্যান্সারে
মারা গেছেন । কিন্তু যতদূর জানা যায় এবডমিনাল ক্যান্সারে অনেক ভুগতে হয় । তবে কেন তাও
তিনি নিজের লাইফ মৃত্যু অবধি টেনে গিয়েছেন জানি না । তবে তিনি যে তার কথার প্রতিপন্থি
নিজের লাইফের শেষ অবধি দেখিয়ে গিয়েছেন ।
২.
সুইসাইড কি? নিজেকে হত্যা করা । নিজেকে মেরে ফেলা । এই নিজেকে নিজে মারার মধ্যে
একটা ব্যাপার থাকে । আমাদের প্রবৃত্তি আমাদের মারলো? নাকি কারো জন্য আমরা নিজেকে উৎসর্গ
করলাম? নাকি বাধ্য করা হলো । এখানেই বেসিক পার্থক্য ।
এখানে ফ্রয়েডীয় ইড, ইগো, সুপার ইগোর প্রয়োজন পড়ে । মানুষ যখন প্রবণতায় তাড়িত হয়ে অচেতনে কিছু
করে এটা হচ্ছে ID, যেটা মানুষ নিজস্ব মোরালিটির থেকে করে যেখানে সব কিছুর উপর মোরালিটি
থাকে সেটা হচ্ছে সুপার ইগো । আর ইগো হচ্ছে রিয়েলিটি , সে সবসময় জাজমেন্টালি কাজ করে
কনসাস আর সাবকন্সাস মাইন্ডে । যেটা সুপার ইগোর ক্ষেত্রে সবগুলাই কাজ করে ।
যখন আপনি প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে হত্যা করবেন সেটা হচ্ছে আপনার আত্মহত্যা ।
যখন পলিটিক্যাল আর রিলিজিয়াস বিপ্লবের জন্য বলি দিবেন সেটা হবে আত্ম-বলিদান বা
Self-immolation ৷ আবার কোন সৈন্য যখন দেশ,জাতি, সমাজ অথবা নিজের বিশ্বাসের
জন্য বলি দেয় সেটা সামরিক আত্ম-হত্যা যার মধ্যে জঙ্গিবাদও অন্তর্ভূক্ত । এখানে প্রথমটা
ইডের জন্য । যেটা হচ্ছে আত্ম-হত্যা । পরের দুইটা সুপার ইগো থেকে, তাই এগুলা আত্মোৎসর্গ
। বিপ্লবের ইস্যুতে না যাই । কেননা বিজিতরাই ইতিহাস লেখে ।
এখন প্রশ্ন মানুষ আত্মহত্যা কেন করে? উত্তর সে আর তার জীবনের সমস্যা সহ্য করতে
পারে না । সবার সহ্যসীমা সমান নয় । এখন সে তো কাউন্সিলিং করতে পারে । বাট আমাদের সমাজ
এই কাউন্সিলিং নিবে না । তকে পাগল বলে Bully করবে । আসলে বাচার জন্য সুস্থ সমাজ দরকার
। বাড়িয়ে দেয়া উচিত সম্প্রিতীর হাত । আমাদের
সমাজে বিনোদনের উপকরণ অনেক আছে মানুষ না হোক । আপনার আত্ম পরিতৃপ্তির জন্য অন্য
মানুষকে ক্ষতি করার অধিকার নাই ।
আর যারা সুইসাইড করবেন বলে মনস্থির করছেন তাদের বলছি নিজের জীবনের বাকি সময়টা
কাউকে দিয়ে যান । জীবন অপব্যয় করার অধিকার আপনার নাই । হাসপাতালের বেডে যেয়ে ক্যান্সার
রোগীকে দেখুন । তারা বাচতে চায় । তারা কষ্টের সময় পার করছে, মৃত্যুর জন্য প্রহর গুনছে
। তাও বাচতে চায় । আর মান সম্মান আরোপিত বিষয় । আপনি ধরে রাখতে পারবেন না । যা আপনার
না তা নিয়ে আফসোস করবেন না । আপনার জীবনও আপনার না । তাই আবার ভাবুন ধৈর্য ধারণ করুন
। সুন্দর আগামী আপনার জন্য অপেক্ষা করছে । কালো রাত কাটবেই । তবে সে পর্যন্ত লড়ােই
করতে হবে । লড়াই করে উঠলে সবাইকে পাশে পাবেন । আগে যাদের পান নাই । এটা আপনি একা না,
সবার সাখে ঘটে চলছে । ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন । নিজেকে মূল্য দিন । অবমূল্যায়ন ও
নয়, বেশি মূল্যায়ন ও নয় । দুটোই ডিপ্রেসনের কারণ । আর নিজের কথা নিজে শুনুন । অন্য
কেউ বাজে রিএকশন দিতে পারে । তার থেকে খারাপ রিএকশন পেলে মন খারাপের কিচ্ছু নেই । কারণ
সে আপনার অবস্তায় হেটে দেখেনি ।
No comments:
Post a Comment